যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ; যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের উপায় - যক্ষ্মা রোগের ...







যক্ষ্মা : উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করার উপায়

যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
ফুসফুসে আক্রান্ত যক্ষ্মার ক্ষেত্রে,
সাধারনত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি
জ্বর
কাশির সাথে কফ এবং রক্ত আসলে
বুকে ব্যথা অথবা শ্বাস নেয়ার সময় অথবা কাশির সময় ব্যথা হওয়া
ওজন কমে যাওয়া
শারীরিক দুর্বলতা
ক্ষুধামন্দা বা খাদ্যে অরুচি
অবসাদ অনুভব করা

যক্ষ্মা : উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করার উপায়
মনে রাখতে হবে, কারও শরীরে যক্ষ্মার সাধারণ লক্ষণসমূহ দেখা দিলে আর বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে কারণ এই অবস্থায় যে কোন লোকেরই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

যক্ষা রোগের জীবাণু যেভাবে ছড়ায়
বাতাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে মিশে যক্ষা রোগের সংক্রমণ ঘটায়। যক্ষ্মা রোগীর প্লেট, গ্লাস এমনকি বিছানা আলাদা করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি যেহেতু হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই যার এ রোগ আছে তাকে কিছু ব্যপারে সতর্ক হতে হবে। যেমন- হাঁচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, হাত দিয়ে মুখ ঢাকা অথবা একদিকে সরে কাশি দিতে হবে। যেখানে সেখানে থুতু বা কফ ফেলা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের কাছাকাছি গিয়ে কথা বললে এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।


রোগ নির্নয়ের জন্য যে ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
রক্তের পরীক্ষা
কফ পরীক্ষা
ত্বকের পরীক্ষা
বুকের এক্স-রে
সিটি স্ক্যান
কালচার টেস্ট

অনেক সময় পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যেমন-
সাধারনভাবে যক্ষা সংক্রমণের ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ পর তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে রোগ ধরা নাও পড়তে পারে।
শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু বেশী মাত্রায় ছেয়ে গেলে ত্বকের পরীক্ষায় এ রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে।
হামের টিকা নিলে এগুলোতে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু থাকে, এর জন্য ত্বক পরীক্ষায় যক্ষার জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে।
এইডস এর মতো কোন রোগের কারণে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অনেক সময় পরীক্ষায় যক্ষা রোগ ধরা নাও পড়তে পারে আবার এইডস এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো প্রায় একই রকম হওয়ায় এইডস রোগীদের যক্ষা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হতে পারে।

কাদের যক্ষা হবার সম্ভাবনা বেশি?
যাদের যক্ষায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছেঃ

অপুষ্টি
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম।
বয়স্ক ব্যক্তি
যক্ষায় সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি।
যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করছেন।

যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের উপায়
যক্ষ্মা বা টিবি রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একজন সুস্থ ব্যক্তিকে নিম্মলিখিত বিষয়গুলোর ব্যপারে সাবধান হতে হবেঃ

জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে।
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বাসস্থানের পরিবেশ খোলামেলা, আলো-বাতাস সম্পন্ন হতে হবে।
জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসকারী রোগের ক্ষেত্রে, সুষ্ঠু চিকিৎসা নিতে হবে।
যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে সবসময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে।
যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর সাথে কথা বলার সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে অন্য সবার থেকে একটু আলাদা রাখতে হবে।
জীবাণুযুক্ত রোগীকে যেখানে সেখানে কফ ফেলা পরিহার করতে হবে।

যক্ষ্মা : উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করার উপায়

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা
যক্ষা রোগ ভালো হওয়ার জন্য সাধারণত ছয় মাসের চিকিৎসা করা হয়। প্রথম দুই(২) মাস চার ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তী চার মাস দুই ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত যক্ষার ওষুধ কিছুদিন খাওয়ার পর শতকরা ৮০ ভাগ লক্ষণ চলে যায়। তখন রোগী ভাবে সে হয়তো সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে এবং ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতি হলে, অন্যরকম চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তখন ৫টা ওষুধ দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা আরম্ভ করতে হয়।

যক্ষার চিকিৎসায় প্রথম দুই মাস যে চারটি ওষুধ দেওয়া হয় তা নিয়মিত খেতে হবে। একদিনও বাদ দেওয়া যাবে না এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। সাধারণত রোগীর ওজন অনুযায়ী ওষুধের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে।

যক্ষা রোগের ওষুধ
যক্ষা রোগের চিকিৎসায় সাধারণত রিফাম্পিসিন, পাইরাজিনামাইড, আইসোনিয়াজিড, ওফ্লক্সাসিন, ইথামব্যুটল, স্ট্রেপ্টোমাইসিন, ইথিওনামাইড, রিফাবিউটিন,, সাইক্লোসেরিন, প্যারা অ্যামিনো স্যালিসিলেট ইত্যাদি ঔষধের ব্যবহার হয়।

Comments