সাবান
পরিস্কার থাকার জন্য এবং সব কিছু পরিস্কার রাখার জন্য সাবান খুব প্রয়োজন। সাবান আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। প্রতিদিন নানান কাজে আমরা সাবান ব্যবহার করি। সাবান হল তেল-চর্বি ও ক্ষার মিশ্রিত এক ধরণের কঠিন পদার্থ যা পরিস্কার থাকার জন্য এবং সবকিছু পরিস্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সবারই প্রতিদিন সাবানের দরকার হয়। ঘরে বসে সাবান তৈরি করে বাজারজাত করে আয় করা সম্ভব।
|
সাবানের চাহিদা শহর গ্রাম সবখানেই থাকে। এটি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। সাবান তৈরি করে মুদি ও মনোহারী দোকানে পাইকারী ও খুচরা দামে বিক্রয় করা যায়। কাছের ও দূরের হাট, বাজার, শহর সবখানে সাবান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা যায়। সবারই সাবানের প্রয়োজন হয়, তাই ঘরে বসেই পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের কাছে সাবান বিক্রয় করা সম্ভব।
সাবান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ কিনতে প্রায় ২৯৫৮ থেকে ৩২১৫ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ১২টি সাবান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে ৬৫ থেকে ৮০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক,প্রশিকা)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে সাবান তৈরি করার কৌশল শিখে নিলে সহজেই সাবান তৈরি করা যাবে। গায়ে মাখা সাবান তৈরিতে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তাই প্রথমে কাপড় কাচা সাবান তৈরি শুরু করাই ভালো। অভিজ্ঞতা হলে পরে গায়ে মাখা সাবান তৈরি করা উচিত।
- স্থায়ী উপকরণ
উপকরণ | পরিমাণ | আনুমানিক মূল্য (টাকা) | প্রাপ্তিস্থান |
দাঁড়িপাল্লা | ১টি | ২০০-২২০ | হার্ডওয়ারের দোকান |
লোহার কড়াই | ১টি | ১০০-১১০ | তৈজসপত্রের দোকান |
মগ | ১টি | ১০-১৫ | তৈজসপত্রের দোকান |
চুলা | ১টি | ১০০-১১০ | হার্ডওয়ারের দোকান |
চামচ ও নাড়ানি কাঠি | ১টি | ৮-১০ | তৈজসপত্রের দোকান |
ঢালার জন্য ডাইস | কয়েকটা | ১৫০০-১৬০০ | ডাইস তৈরির কারখানা |
ছাপ দেবার যন্ত্র | ১টি | ১০০০-১১০০ | ডাইস তৈরির কারখানা |
রাবারের মোজা | ১ জোড়া | ৪০-৫০ | ঔষধের দোকান |
মোট=২৯৫৮-৩২১৫ টাক |
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- কাঁচামাল (এক ডজন কাপড় ধোয়া সাবান তৈরির জন্য)
উপকরণ | পরিমাণ | আনুমানিক মূল্য (টাকা) | প্রাপ্তিস্থান |
তেল/চর্বি | ১ লিটার | ৩৫-৪০ টাকা | মুদি দোকান |
কস্টিক সোডা | ৫০০ গ্রাম | ১০-১২ টাকা | কেমিক্যালসের দোকান |
সোডিয়াম সিলিকেট | ১ লিটার | ১০-১২ টাকা | কেমিক্যালসের দোকান |
সুগন্ধি | প্রয়োজন মতো | ৫-৮ টাকা | কেমিক্যালসের দোকান |
রং | প্রয়োজন মতো | ৫-৮ টাকা | কেমিক্যালসের দোকান |
মোট=৬৫-৮০ টাকা |
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।
তেল/ চর্বি সাবান তৈরির জন্য তেল ও চর্বির প্রয়োজন হয়। শুধু তেল ব্যবহার করে সাবান তৈরি করা যায়। তবে চর্বি ব্যবহার করলে ভালো হয়। সাবান তৈরিতে ভেজিটেবল চর্বি ও পশুর চর্বি ব্যবহার করা হয়। শুধু চর্বি দিয়েও সাবান তৈরি করা যায়। তবে এই সাবানে ফেনা খুব কম হয়। দুই তিন রকমের তেল, যেমন-নারিকেল তেল, পাম তেল, বাদাম তেল, মহুয়ার তেল, সয়াবিন তেল ব্যবহার করলে সাবান ভালো হয়। এছাড়া তুলা বীজ তেল, ভুট্টা তেল, রেড়ি তেল ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায়। |
|
কস্টিক সোডা
এটা হচ্ছে একটি ক্ষার। বাজারে গুঁড়া ও কঠিন দুই ভাবেই এটা পাওয়া যায়। গুঁড়া কস্টিক সোডা সস্তা ও তাড়াতাড়ি গলে। তাই এটা ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ঘন ক্ষার চামড়ায় লাগলে ক্ষতি হয়। কাপড় পুড়ে যেতে পারে। তাই ক্ষার ব্যবহার করার সময় রাবারের দস্তানা ব্যবহার করতে হবে।
সোডিয়াম সিলিকেট
এটা স্বচ্ছ আঠার মতো জিনিস। সাবানকে শক্ত ও ভারী করার জন্য সোডিয়াম সিলিকেট ব্যবহার করা হয়। বেশি ব্যবহার করলে সাবান একেবারে শক্ত হয়ে যায় ফেনা হতে চায় না। তাই পরিমাণ ও নিয়ম অনুযায়ী এটা ব্যবহার করতে হবে।
সুগন্ধি
নানা ধরণের ও গন্ধের আতর বা তেল দোকানে পাওয়া যায়। সাবান তৈরির সময় পরিমাণ মতো সুগন্ধি মিশিয়ে দিতে হবে।
রঙ
সাবানে এমন রঙ ব্যবহার করা উচিত যা চামড়ার জন্য ক্ষতিকর নয়। পানি ও তেলে গলে এমন রঙ কিনতে হবে।
- সাবান তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তেল, চর্বির সঙ্গে কষ্টিক সোডার অনুপাত। এটা ঠিক না হলে সাবানে বাড়তি তেল বা ক্ষার থেকে যাবে। সাধারণত ১০০ গ্রাম ওজনের তেল চর্বির সাথে ১৪ থেকে ১৯ ভাগ ওজনের কষ্টিক সোডা মিশাতে হয়।
সাধারণত ১০০০ গ্রাম বা ১ কিলো তেল চর্বিতে ১৮০ গ্রাম কষ্টিক সোডা, ১ কিলো সোডিয়াম সিলিকেট ও ৮০০ গ্রাম পানি মিশানো হয়।
- প্রথমে বালতি বা বড় কোন পাত্রে ৮০০ গ্রাম পানিতে ১৮০ গ্রাম কস্টিক সোডা অল্প অল্প করে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশানোর পর মিশ্রণটি ধীরে ধীরে গরম হয়ে উঠবে এবং বুদবুদ উঠবে। সোডা মেশানো পানি যেন গায়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সোডা ও পানি মেশানো হয়ে গেলে ঠান্ডা হবার জন্য একদিন রেখে দিতে হবে।
- তেল ও চর্বি কড়াইয়ে রেখে চুলার গরম করতে হবে। থার্মোমিটারের ৯০ ডিগ্রি উঠলে কড়াই নামিয়ে ফেলতে হবে। এবার এতে সিলিকেট মিশিয়ে নড়াতে থাকতে হবে। থার্মেমিটার ৫৫ থেকে ৬০ ডিগ্রিতে নেমে না আসা পর্যন্ত নাড়তে হবে।
- এবার সোডা গোলা পানি আস্তে আস্তে তেল ও সিলিকেটের মিশ্রণের সাথে মেশাতে হবে। নাড়ানি দিয়ে ধীরে ধীরে মেশাতে হবে। মেশানো হয়ে গেলেও একইভাবে নাড়তে হবে। তেল চর্বি আর কস্টিক সোডা বিক্রি করে সাবান হতে থাকবে। এক সময় এগুলো সুজির মতো দানাদার হয়ে উঠবে। যতক্ষণ না এই দানাদার ভাব চলে গিয়ে মসৃণ মধু বা ঘন তরলের মতো না হয় ততক্ষণ নাড়তে হবে। এতে আধ ঘণ্টার উপর সময় লাগতে পারে।
- রঙ বা সুগন্ধি মেশাতে চাইলে এই সময় মিশিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে।
- ঢালার জন্য কাঠের যে খোপ বা ডাইস আছে তাতে পলিথিন বিছিয়ে নিতে হবে এবং তার উপর গরম সাবান ঢেলে শুকনো জায়গায় রেখে দিতে হবে। চট-ছালা বা কম্বল দিয়ে ১/২ দিন ঢেকে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তরল সাবান শক্ত হয়।
- ছাঁচ থেকে জমাট বাঁধা সাবান বের করে ছুরি বা তার দিয়ে মাপ মতো কাটতে হবে। তারপর এক সপ্তাহ ঘরের মধ্যে শুকনোর জন্য রেখে দিতে হবে।
- সাবানে বিশেষ আকৃতি দিতে চাইলে শুকানোর পর ছাপ দেওয়া যন্ত্রের মাধ্যমে বিশেষ আকৃতি দিতে হবে।
- একটি ভালো সাবান দেখতে সুন্দর ও এতে টাটকা গন্ধ থাকবে।
| | ||
ছবি: পানি ও কস্টিক সোডার মিশ্রণ তৈরি ছবি তোলার স্থান: বদলগাছী, নওগাঁ। | ছবি: তেল ও চর্বি গরম করা ছবি তোলার স্থান: বদলগাছী, নওগাঁ। | ছবি: খোপ বা ডাইসে সাবান ঢালা ছবি তোলার স্থান: বদলগাছী, নওগাঁ। | ছবি: ওজন করার যন্ত্র ছবি তোলার স্থান: বদলগাছী, নওগাঁ। |
- সাবধানতা
- সোডা ব্যবহারের সময় সাবধান থাকতে হবে। কারণ সোডা গায়ে লাগলে চামড়ার ক্ষতি হবে।
- প্রয়োজনীয় উপকরণ সঠিক অনুপাতে মেশাতে হবে।
- মোট খরচ
খরচের ক্ষেত্র | আনুমানিক মূল্য (টাকা) |
১২টি কাপড় কাচার সাবান তৈরির জন্য কাঁচামাল বাবদ খরচ | ৬৫-৮০ টাকা |
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ | ১০-১৫ টাকা |
মোট খরচ | ৭৫-৯৫ টাকা |
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- আয় ও লাভ
বর্তমান বাজারে প্রতিটি সাবানের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা
১২টি সাবানের বিক্রয় মূল্য | ৯৬-১২০ টাকা |
১২টি সাবান তৈরি করতে খরচ | ৭৫-৯৫ টাকা |
মোট লাভ | ২১-২৫ টাকা |
বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও আয় নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামা করে। তাই এই ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। |
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।
সাবান হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। সবারই সাবানের প্রয়োজন হয়। তাই এরকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে সহজেই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
প্রশ্ন ১ : সাবান কেন ব্যবহার করা হয় ?
উত্তর : পরিস্কার থাকার জন্য, সবকিছু পরিস্কার রাখার জন্য সাবান ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন ২ : সাবানের বাজার মূলত কোথায় ?
উত্তর : শহর গ্রাম সবখানেই সাবানের চাহিদা থাকে।
প্রশ্ন ৩ : সাবান তৈরির জন্য স্থায়ী উপকরণ কেনার জন্য কত টাকার প্রয়োজন ?
উত্তর : স্থায়ী উপকরণ কেনার জন্য প্রায় ২৯৬৮-৩২১৫ টাকার প্রয়োজন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
সাবান তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য গত ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নাসরিন বেগমের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাবান তৈরির ব্যবসা সার্বিক বিষয় জানার জন্য নিচের বইগুলোর সাহায্য নেওয়া হয়েছে:
- শরীফ, শহীদুল্লাহ, নভেম্বর ২০০১, সাবান, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯।
- ইব্রাহীম, মুহাম্মদ, মার্চ ১৯৯২, মোমবাতি তৈরি, সাবান তৈরি, বিজ্ঞান গণশিক্ষা কেন্দ্র, ঢাকা।
- খান, মো. আলী আশরাফ, জানুয়ারি ১৯৯৭, স্ব-কর্মসংস্থানে কুটির শিল্প, লীনা প্রকাশনী, সিরাজগঞ্জ।
- ঘোষ, স্বপন কুমার, জানুয়ারি ১৯৯৩, গ্রামীণ কুটির শিল্প, দে’জ পাবলিশিং কলকাতা-৭০০০০১।
- রব, আবদুর, মে ১৯৯৯, সাবান তৈরি, স্মল এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, আইটিডিজি-বাংলাদেশ।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে সাবান তৈরির ফর্মুলা বর্ননা করার জন্য।
ReplyDeleteবাটি বা বল সাবান তৈরি করিতে যে ডাইসের প্রয়োজন হয় তা কোথায় পাওয়া যায় ইহার একটি ঠিকানা আমাকে অনুগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করুন sir ইহার একটি ঠিকানা যদি দেন তাহলে আমি অত্যান্ত উপকৃত পারিবো sir
ReplyDeleteধন্যবাদ তথ্য দেওয়ার জন্য
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ
ReplyDeleteআমাকে কি সহযুগিতা যাবে 01889896651
ReplyDeleteApnr mobile number deya jabe?
ReplyDelete