প্রথমেই জেনে নেয়া যাক জ্বর কি?
জ্বর সাধারণত পাইরক্সিয়া নামেও পরিছিত। এটা হচ্ছে শারীরিক আসুশততার অন্যতম কারন বা লক্ষণ, যা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সীমার ৩৬.৫-৩৭.৫ ডিগ্রি সে (৯৭.৭-৯৫.৫ ডিগ্রি ফা) অধিক তাপমাত্রা নির্দেশ করে। এই তাপমাত্রা বেড়ে গেলেই আমরা তাকে জ্বর বলতে পারি। আর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই হল দেহে পাইরোজেন উৎপন্ন হয়েছে।
সাধারণত নিজের গায়ে হাত দিয়েই আমরা জ্বর নির্ণয় করতে পারি। শরীরটা একটু গরম হলেই জ্বর জ্বর ভাব আসে, বেশি গরম হলে সাধারণত জ্বরে কাতর, আর মাঝে মাঝে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর চলে আসে। মেডিকেল সাইন্সে সাধারণত জ্বর মানেই হচ্চে কোনো ইনফেকশনের উপস্থিতি অথবা শরীরে কোনো প্রদাহ। জ্বর হল আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের একটা খেলা, যা শরীরের তাপমাত্রার সেট পয়েন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে।
জ্বরের প্রকেরভেদ
তাপমাত্রা পরিবর্তনের ধরন রোগের উপর নিরভরশিল। জ্বর এর পরিবর্তনের ধরন থেকেই কখনো কখনো রোগ নির্ণয় সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যেতে পারেঃ
একটানা জ্বরঃ সারাদিন ধরে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে এবং ২৪ ঘণ্টার ১ ডিগ্রি সে. এর বেশি তাপমাত্রা পরিবর্তন হয় না। যেমনঃ লোবার নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, মূত্রনালির ইনফেকশন, ব্রুসেলসিস, টাইফাস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে একটানা জ্বর পরিলক্ষিত হয়। টাইফয়েড রোগের ক্ষেত্রে জ্বরের একটি নির্দিষ্ট আঙ্গিক দেখা যায়। জ্বর ধাপে ধাপে বাড়ে এবং উচ্চ তাপমাত্রা অনেকক্ষণ থাকে
নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বরঃ জ্বর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়ে এবং পরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়, যেমনঃ ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর (kala-azar), পাইয়েমিয়া, সেপ্টিসেমিয়া (রক্তের সংক্রমন)। এর প্রকারভেদগুলো হলঃ
কুয়োটিডিয়ান জ্বরঃ কুয়োটিডিয়ন জ্বরের পর্যায়কাল হল ২৪ ঘন্টা, সাধারণত ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এই জ্বর দেখা যায়।
টারশিয়ান জ্বরঃ এই জ্বরের পর্যায়কাল সাধারানত ৪৮ ঘণ্টা, এটিও ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়।
স্বল্প বিরতিতে জ্বরঃ শরীরের তাপমাত্রা সারদিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকে এবং ২৪ ঘণ্টায় ১0 সে. এর চেয়ে বেশী উঠা নামা করে। যেমনঃ infective endocarditis.
Pel-Ebstein জ্বরঃ এই বিশেষ ধরণের জ্বরটি হজকিন লিম্ফোমা এর ক্ষেত্রে দেখা যায়। জ্বর এক সপ্তাহ বেশী, এক সপ্তাহ কম- এভাবে চলতে থাকে। তবে আদৌ এ ধরণের জ্বর বিদ্যমান কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে
কি কারনে জ্বর হয়ে থাকেঃ জানা-অজানা অনেক কারণে শরীরে জ্বর আসে, আসুন এবার জেনে নাওয়া যাক কিছু জ্বরের লক্ষন-
১. যে কোনও ভাইরাসজনিত প্রদাহ যেমন সর্দি জ্বর, কাশি, ডেঙ্গু, হুপিংকাশি এত্তাদ্য কারনে জ্বর হয়ে থাকে।
২. যে কোনও একুইট ইনফেকশন বিশেষত তৈরিকারক ইনফেকশন যেমন ফোঁড়া, কার্বাংকল, ফুরাংকল। যেসব জীবাণু এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলো হল স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেন্স।
৩. পরজীবী ঘটিত রোগ, যেমন ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ট্রিপোনোসোমা ইত্যাদি।
৪. শরীরের কলা বিনষ্টকারী বা টিস্যু নেক্রোসিস যে রোগে হয়, যেমন মায়োকর্ডিয়াল ইনফেকশন, আর্থাইটিস, রিউমাটিক ফিভার বা বাতজ্বর।
৫. মহিলা ও পুরুষদের জননতন্ত্রের প্রদাহ। যেমন প্রস্রাবে ইনফেকশন, প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন, উফুরাইটিস, সালফিনজাইটিস মেয়েদের অ্যান্ডোমেট্রাইটিস, ইপিডিডাইমাইটিস, অরকাইটিস সার্ভিসাইটিস, ছেলেদের প্রস্টেটাইটিস।
৬. যে কোনও কোষ কলা অর্গানের প্রদাহজনিত রোগ যেমন মেনিনজাইটিস, একুইট অস্টিওমাইলাইটিস, একুইট গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, একুইট হেপাটাইটিস।
৭. যে কোন টিস্যু বা অর্গান এর ক্যান্সারের কারণে জ্বর হতে পারে।
জ্বর হলে যা যা করনীয়?
জ্বর হলে সাধারনত কি করনীয়, এ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। জ্বর হলে অনেকে রোগীর গায়ে কাঁথা চাপিয়ে দেন। তাদের ধারনা, এতে করে রোগীর ঘাম দিয়ে জ্বর ছারবে।জ্বর হলে ঠাণ্ডা হাওয়া আসার ভয়ে ঘরের দরজা-জানালাও অনেকে বন্ধ করে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটাই জ্বর কমানোর পদ্ধতি নয় বা জ্বর কমাতে সাহায্য করে না।
জ্বর কেন হয়? হলে আমাদের জন্য কি করোনিয় আছে
জ্বর হলে এই সময় দ্রুত জ্বর কমাতে সারা শরীর ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে বারবার মুছতে হবে। জ্বর ও শরীরের ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। জ্বর বেশি মাত্রাই হলে মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপজিটরি ব্যবহার করতে হতে পারে। খাওয়ার স্যালাইন, ফলের রস, সরবত ইত্যাদি তরল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। তবে চিকিতশকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
যদি আপনার শিশুর জ্বর হয় তাহলে কি করবেন
জ্বর থেকে রেহাই পেতে করনীয়
১. মুখে মাস্ক পরে বাইরে বের হন।
২. ঝড়ো হাওয়া লাগাবেন না।
৩. বাড়ি ফিরে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে নেবেন।
৪. এসি থেকে বারবার বাইরে বেরবেন না।
৫. পানি ফুটিয়ে খাবেন।
৬. গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ করতে শুরু করলেই প্যারাসিটামল খেয়ে নিন।
৭. জ্বর বাড়লে কুছকি, আর বগলের তলায় বরফ সেঁক দিবেন।
জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন?
Comments
Post a Comment