ম্যালেরিয়া কেন হয়? লক্ষন, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করনীয়







ম্যালেরিয়া কেন হয়? লক্ষন, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করনীয়

ম্যালেরিয়া (Malaria) একটি মশা-বাহিত সংক্রামক রোগ যা স্ত্রী জাতীয় এনোফেলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগের মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম (Plasmodium) গোত্রের এক ধরনের অণুজীব। ম্যালেরিয়া রোগটি একটি সংক্রমিত স্ত্রী জাতীয় এনোফেলিস মশার কামড়ের সাথে শুরু হয়। ম্যালেরিয়ার পরজীবী লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে, ফলে রোগীর শরীরে রক্তসল্পতার লক্ষণ দেখা যায়। বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় এই রোগের প্রবণতা বেশী দেখা যায়। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

ম্যালেরিয়া কেন হয়?
স্ত্রী জাতীয় এনোফেলিস মশাবাহিত বিশেষ এক ধরণের জীবাণুর (Plasmodium) দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে।

ম্যালেরিয়া জীবাণু কিভাবে ছড়ায়

সাধারণত স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ম্যলেরিয়া জীবাণু ছড়ায়।
ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে যখন কোন সুস্থ্য স্ত্রী এনোফিলিস মশা কামড়ায় তখন এটি নিজের মধ্যে এক ধরণের জীবাণু (Gametocytes) গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এই মশা যখন অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পরে এবং সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।
গর্ভবতী মহিলা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে তার গর্ভের সন্তানও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোন ব্যক্তি অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে রক্ত দিলে।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
রোগের লক্ষণের ধরন অনুসারে ম্যালেরিয়া রোগকে কে (১) সাধারণ ম্যালেরিয়া ও (২) মারাত্মক ম্যালেরিয়া এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়৷

সাধারণ ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ

ম্যালেরিয়া জ্বর সাধারণত থেকে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আসে৷
মাঝারি থেকে তীব্র কাপুনি দিয়ে শীত/ঠান্ডা লাগা।
গায়ে প্রচন্ড ব্যথা হয়৷
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে অত্যধিক ঘাম হওয়া
হজমের গোলযোগ দেখা যায়।
মাথা ব্যাথা
বমি বমি ভাব অথবা বমি
ডায়রিয়া
শরীর দুর্বল অনুভূত হয় ও ক্লান্তি লাগে।
এ সময়ে খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়৷ তাই এ সময় রোগীকে হালকা ধরনের খাবার বিশেষ করে তরল খাদ্য দেয়া উচিত।

মারাত্মক ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
ম্যালেরিয়া রোগের জটিল ধরন হলো মারাত্মক ম্যালেরিয়া। জরুরী চিকিৎসা না পেলে এসব রোগীর মৃত্যু হতে পারে৷ সেরিব্রাল বা মারাত্মক ম্যালেরিয়া রোগে নিম্নলিখিত লক্ষন ও উপসর্গসমূহ দেখা যায়ঃ

পানিশূন্যতা
রক্ত শূণ্যতা
যকৃত বা লিভারের অকার্যকারিতা
শ্বাসকষ্ট হওয়া
কিডনির অকার্যকারিতা
খিঁচুনি
জন্ডিস
রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া, এক্ষেত্রে রোগীর বারবার বমি হয়, নিজে বসতে, দাঁড়াতে বা হাঁটতে অসুবিধা হয় এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?
ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা অথবা পার্বত্য এলাকায় থাকা অবস্থায় অথবা সেইসব এলাকা থেকে ঘুরে আসার পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে জ্বর দেখা দিলে সেক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ম্যালেরিয়া নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের উপসর্গ এবং ভ্রমণ ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে ৩ থেকে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ২ বার রক্ত পরীক্ষা করতে হতে পারে। ম্যালেরিয়া সাধারণত ব্লাড-ফিল্মস ব্যবহার করে রক্তের দূরবীক্ষণ পরীক্ষা অথবা অ্যান্টিজেন ভিত্তিক দ্রুত ডায়গনিস্টিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা
কোন ঔষধ কতদিন সেবন করতে হবে এবং কতদিন চিকিৎসা করতে হবে তা কিছু বিষয় যেমন- রোগীর বয়স, চিকিৎসা শুরুর সময় অসুস্থতার পরিমান, ম্যালেরিয়ার ধরণ, কোথায় সংক্রমণ হয়েছে ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সেরিব্রাল বা মারাত্মক ম্যালেরিয়া রোগীকে মুখে খাওয়ার ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়৷ ফলে এদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হয়৷ ম্যালেরিয়া রোগে সাধারনত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে বা শিরাপথে ক্লোরোকুইন, হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন, কুইনিন সালফেট, মেফ্লোকুইন, পাইরিমেথামাইন, সালফাডক্সিন ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে করনীয়

খাটে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
জানালা ও দরজায় নেট ব্যবহার করতে হবে।
মশা তাড়াবার জন্য মশার কয়েল, ভেপরম্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
প্রয়োজনে ঘরের দেয়ালে কীটনাশক জাতীয় ঔষধ ছিটানো।
বাড়ির আশেপাশে কোন ঝোপ জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
জমা পানি বের করে দিতে হবে, যেখানে সাধারণত মশা ডিম পাড়ে। জমা পানিতে মশা ডিম পারলে সেখানে কীটনাষক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দিতে হবে।
ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার দুই থেকে তিন মাস আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (প্রতিষেধক ঔষধ) নিতে হবে।
ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা থেকে ফেরার চার সপ্তার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক ঔষধ সেবন করতে হবে।



Comments

  1. ম্যালেরিয়া জ্বর বিষয়টি আমার জন্য অন্যদিকের বিষয় ছিল। আমি ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ এবং প্রতিকারের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চেষ্টা করেছি এবং এই লেখা পড়ে আমার জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করেছে।

    লেখাটি ম্যালেরিয়া জ্বরের উপর একটি উপযুক্ত বিবরণ দিয়েছে, যা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও লেখা আরও জানাচ্ছে যে কিভাবে ম্যালেরিয়া জ্বর প্রতিকার গ্রহণ করতে হয় এবং এর জন্য চিকিৎসা করা উচিত।

    আমি এই লেখার করার পক্ষে অত্যন্ত আনন্দিত, যে ম্যালেরিয়া জ্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এবং এর প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে লেখা ব্যক্তির জন্য অপরিসীম

    ReplyDelete

Post a Comment