রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কি? রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়: রক্তচাপ বা ব্লাড...







ব্লাড প্রেসার সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যা আপনার সুস্থ জীবনের জন্য জানা একান্ত জরুরী


প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ব্লাড প্রেসার কি ?

এবার চলুন ব্লাড প্রেসারের মাত্রা অর্থাৎ ব্লাড প্রেসারটা বেশী না কম এটা আমরা কিভাবে বুঝব সে সম্পর্কে একটা ধারণা দিইঃ

মাত্রা উপরের প্রেসার (সিস্টোলিক) নীচের প্রেসার (ডায়াস্টোলিক)

১. স্বাভাবিক ১২০ মিলিমিটার মার্কারী বা এর কম ৮০ মিঃমিঃ মার্কারী বা এর কম

২. প্রেসার আসন্ন ১২০-১৩৯ মিঃমিঃ মার্কারী ৮০-৮৯ মিঃমিঃ মার্কারী

৩. গ্রেড ১ প্রেসার ১৪০-১৫৯ মিঃমিঃ মার্কারী ৯০-৯৯ মিঃমিঃ মার্কারী

৪. গ্রেড২ প্রেসার ১৬০ মিঃমিঃ মার্কারী বা এর বেশী ১০০ মিঃমিঃ মার্কারী বা এর বেশী

রক্তচাপ বৃদ্ধি রোগের লক্ষন:-
(ক) রক্তচাপ বৃদ্ধি হলে মাথায় যন্ত্রনা হয়।

(খ) অল্পতেই ধৈর্য হারাতে হয়, রাতে ভালো ঘুম হয় না।

(গ) মাঝে মাঝে কানের মধ্যে সোঁ সোঁ আওয়াজ হয়।

(ঘ) রাগ বেড়ে যায়, চিৎকার বা গন্ডগোল সহ্য হয় না।

(ঙ) মাঝে মাঝে ঘাড় ব্যথা করে এবং শরীর অস্থির হয় ও কাঁপতে থাকে।

(চ) বাদিকে শুতে কষ্ট হয়।

(ছ) মাঝে মাঝে রোগী জ্ঞান পর্যন্ত হারাতে পারে

ব্লাড প্রেসার (Blood pressure)ঃ নামে অতিপরিচিত রোগটির নাম ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলা হয় । হাইপারটেনশন রোগটি সকলের না থাকলেও সুস্থ্য অসুস্থ প্রতিটি মানুষেরই ব্লাড প্রেসার থাকে, আসলে হৃদপিন্ড রক্তকে ধাক্কা দিয়ে ধমনীতে পাঠালে ধমণীর গায়ে যে প্রেসার বা চাপ সৃষ্টি হয় তাই হলো ব্লাড প্রেসার। এই চাপ এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে আর যখন তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনি তাকে বলা হয় হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ।

ব্লাড প্রেসার সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যা আপনার সুস্থ জীবনের জন্য জানা একান্ত জরুরী

হাইপারটেনশন (যা হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নামে অধিক পরিচিত) হলো একটি জটিল দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) স্বাস্থ্যগত বিষয়, যার ফলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ এবং উপসর্গ নেই, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা, দ্বিধাগ্রস্থতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার মুহুর্তেই বয়ে আনতে পারে চরম পরিণতি। করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের ফলে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্ত চাপের বেলায় কি কি নিষেধ ও করা উচিৎ জেনে নিনঃ
যেহেতু উচ্চ রক্ত চাপের প্রাথমিক চিকিৎসা ই হচ্ছে জীবন যাত্রার ধারা ও কিছু খাদ্যের বেলায় বিশেষ সতকতা – তাই অনুগ্রহ করে তা মনে রাখবেন এবং অন্য কে ও উৎসাহিত করবেন। চর্বি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করবেন যেমনঃ ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছের ডিম, খাসি বা গরুর চর্বিযুক্ত মাংস, হাস-মুরগীর চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, মাখন, ডালডা,মার্জারিন, গলদা চিংড়ি, নারিকেল ইত্যাদির দ্বারা তৈরী খাবার। চেস্টা করবেন কোলেস্টারল ফ্রি খাবার তবে- শাক, সবজি-বিশেষত খোসা সহ সবজি যেমন ঢেড়স, বরবটি, সিম ইত্যাদি, সব ধরনের ডাল, টক জাতীয় ফল বা খোসা সহ ফল ইত্যাদি। – লবন জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকবেন ( বিশেষ করে কাচা লবন খাবেন না )।

নিম্ন রক্তচাপ
আমাদের শরীরের জন্য উচ্চরক্তচাপের মতোই নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো ব্লাড প্রেসার ক্ষতিকারক। লো ব্লাড প্রেসারের আরেক নাম হাইপোটেনশন। অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে।

অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা দেখা দেয়।

প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।আসুন জেনে নাওয়া যাক কতিপয় কিছু উপায়গুলোঃ
লবণ পানিঃ লবণে রয়েছে সোডিয়াম যা রক্তচাপ বাড়ায়। তবে পানিতে বেশি লবণ না দেওয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ চিনি ও এক-দুই চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চিনি বর্জন করতে হবে।

কফিঃ স্ট্রং কফি, হট চকলেট, কোলাসহ যেকোনো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। যারা অনেকদিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন তারা সকালে ভারি নাশতার পর এক কাপ স্ট্রং কফি খেতে পারেন।

কিছমিছঃ হাইপোটেনশনের ওষুধ হিসেবে অতি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিছমিস। এক-দুই কাপ কিছমিছ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালিপেটে সেগুলো খান। সঙ্গে কিছমিছ ভেজানো পানিও খেয়ে নিন। এছাড়াও পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চীনাবাদাম খেতে পারেন।

পুদিনাঃ ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে। পুদিনা পাতা বেঁটে তাতে মধু মিশিয়ে পান করুন।

যষ্টিমধুঃ যষ্টিমধু আদিকাল থেকেই নানা রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে পান করুন। এছাড়াও দুধে মধু দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

বিটের রসঃ বিটের রস হাই প্রসার ও লো প্রেসার উভয়ের জন্যই সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। হাইপোটেনশনের রোগীরা দিনে দুই কাপ বিটের রস খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

Comments