কৃমি থেকে বাচার উপায়: কৃমি কেন হয় ও কৃমি রোগের লক্ষণ, কৃমি হলে করনীয় ...







কৃমি থেকে মুক্তি পেতে করনীয়কৃমি কি

কৃমি মানুষের শরীরে বসবাসরত একটি ক্ষতিকর পরজীবী। সাধারণত এরা মানুষের অন্ত্রে বাস করে শরীর থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকে এবং বংশ বৃদ্ধি করে৷ কৃমির ডিম্বাণু মানুষের মুখের সাহায্যে প্রবেশ করতে পারে আবার ত্বকের সাহায্যেও লাভা হিসেবেও প্রবেশ করতে পারে। অনেক সময় কৃমি মানুষের যকৃত বা অন্য কোন অঙ্গতেও আক্রমণ করতে পারে। কৃমি দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো এবং এই কৃমির রঙ হালকা হলুদ হয়ে থাকে। পরিণত অবস্থায় একটি কৃমি ৬ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আমাদের দেশে কেঁচো কৃমি, বক্র কৃমি ও সুতা কৃমিতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি৷

কৃমির প্রকারভেদ
কৃমি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- গোল কৃমি (এগুলো সাধারণত গোল, পাতলা, সাদা বা গোলাপী রঙের হয় এবং লম্বায় ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে), সুতা কৃমি (এগুলো সুতার মত, ছোট, পাতলা এবং সাদা রঙের হয়), বক্র কৃমি (এগুলো আকারে খুবই ছোট, গারো গোলাপী রঙের হয় এবং খালি চোখে দেয়া যায় না), ফিতা কৃমি (এগুলো ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে)।

যেভাবে বংশবৃদ্ধি করে
সাধারণত দূষিত পানি, নোংরা খাবার এবং অপরিষ্কার শাকসবজি বা ফলমূলের মাধ্যমে কেঁচো কৃমির ডিম আমাদের মুখে প্রবেশ করে। আবার, আক্রান্ত ব্যাক্তির পোশাক থেকে বা হাত ঠিকমতো না ধুলেও কেঁচো কৃমির ডিম আমাদের পেটে যেতে পারে।
এই ডিম সেখান থেকে খাদ্যনালীর ক্ষুদ্রান্তে যায় এবং ক্ষুদ্রান্তের এনজাইম বা পাচকরসের সাহায্যে ডিম থেকে লার্ভা বের হয়৷
লার্ভাগুলো আবার রক্তের মাধ্যমে যকৃত, হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের এলভিওলাই ছিদ্র করে শ্বাসনালী দিয়ে অন্ননালী পার হয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে অবস্থান করে।
লার্ভাগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রে এসে পূর্ণতা লাভ করে এবং ডিম পাড়ে৷
একটা স্ত্রী কৃমি মানুষের অন্ত্রে সাধারনত দৈনিক প্রায় ২ লাখ ডিম পারে।

কৃমি হওয়ার কারণ
কৃমির ডিম বা লার্ভা সাধারণত দূষিত পানি, নোংরা খাবার এবং অপরিষ্কার শাকসবজি বা ফলমূল, আক্রান্ত ব্যাক্তির পোশাক বা হাত ঠিকমতো পরিস্কার না করলে আমাদের মুখে প্রবেশ করতে পারে। আবার কৃমির লার্ভা মাটি থেকে পায়ের ত্বকের মাদ্ধমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বেশ কিছু কারণে কৃমি হতে পারে। যেমন-

দূষিত পানি বা খাবার খেলে।
রান্নার পূর্বে শাকসবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি ভালভাবে না ধুয়ে রান্না করলে।
সাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার না করলে।
পায়খানার পরে, খেলাধুলা বা কাজকর্মের শেষে এবং খাবার খাওয়ার পূর্বে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত পরিস্কার না করলে।
অন্যের পোশাক, তোয়ালে বা রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করলে।

কৃমির চিকিৎসা
কৃমি আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মল পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়না। পায়খানা বা বমির সঙ্গে কেঁচো কৃমি বের হলে, রাতে মল দ্বার চুলকালে ধরে নেয়া যায় যে তার কৃমি আছে। যদি মল পরীক্ষার সুযোগ কিংবা সামর্থ্য না থাকে তাহলেও কৃমি আছে এরূপ সন্দেহ হলে মল পরীক্ষা না করিয়েও কৃমির ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসা গ্রহনের আগে মল পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া ভালো৷ গর্ভবতী মহিলা, জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ঔষধ খেতে হবে৷

কৃমি প্রতিরোধে করনীয়
কৃমি প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবেঃ


সবসময় বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ খাবার খেতে হবে।
নিয়মিত গোসল করতে হবে এবং পরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করতে হবে।
নখ বড় রাখা যাবে না। কারন- অনেক ক্ষেত্রেই বড় নখের কারনে কৃমির ডিম নখের সাহায্যে পেটে প্রবেশ করতে পারে।
রান্নার পূর্বে ভালোভাবে শাক সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি ধুয়ে তারপরে রান্না করতে হবে।
খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুতে হবে।
মল ত্যাগের পর অবশ্যই সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ভালভাবে পরিস্কার করতে হবে।

আক্রান্ত হলে সেসব জটিলতা হতে পারে?
কৃমিতে আক্রান্ত হলে বেশকিছু জটিলতা হতে পারে। যেমন- পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হতে পারে, শরীরে রক্তশূণ্যতা দেখা দিতে পারে, শরীরের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হতে পারে, শিশুদের ক্ষেত্রে, পেট ফুলে যেতে পারে, শরীর ফ্যাকাসে এবং দূর্বল হয়ে যেতে পারে, পেটে তিব্র ব্যথা অনুভুত হতে পারে, কোন কিছু বোঝা বা শেখার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে ইত্যাদি।

কৃমিনাশক ওষুধ কখন সেবন করবেন
দু’বছরের বেশি বয়সী শিশু অথবা বড়রা কৃমিনাশক ওষুধ চার মাস পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারবেন।
একক মাত্রার ওষুধের ক্ষেত্রে বাতের বেলায় ওষুধটি সেবন করতে হবে।
অপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।



Comments