চোখ উঠা (Conjunctivitis) চোখের একটি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। কনজাংটিভা নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জির কারণেও চোখ ওঠে। সাধারণভাবে চোখ ওঠা বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হলেও কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র।
চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালে কারও চোখ ওঠে না। যদিও ভাইরাসে আক্রান্ত চোখ কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় কিন্তু অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে হওয়ার কারনে আশপাশের অনেককেই আক্রান্ত করতে পারে। এ ধরনের রোগী কতদিনে সুস্থ্য হবে সেটা নির্ভর করে, তিনি কি ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত এবং তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।
চোখ ওঠার কারন?
জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাস, স্কেলেরার ইনফেকশন, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশন ইত্যাদি নানান কারণে চোখ লাল হতে পারে। ভাইরাস কেরাটাইটিস অথবা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণত এ ধরনের ইনফেকশনে এক চোখ আক্রান্ত হয়। এছাড়াও ময়লা, ধূলাবালি, ঔষধ, কেমিক্যালস্ অথবা প্রসাধনী ব্যবহারের সময়ও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হল। সবগুলো উপসর্গ একসাথে দেখা যেতে পারে আবার নাও যেতে পারে।
চোখের চারপাশে হালকা লাল রং হতে পারে।
চোখের পাতা ফুলে যায়।
চোখ জ্বলবে।
চোখের ভেতর অস্বস্থি শুরু হয়।
রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়।
চোখ থেকে অতিমাত্রায় পানি পড়ে।
সামান্য ব্যথা হয়।
চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে থাকে ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়।
ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে।
সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গসমূহ কমতে থাকে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় এবং কর্নিয়াতে সাদা দাগ পড়ে, যা খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না।
চোখ উঠা রোগের জীবাণু যেভাবে ছড়ায়
এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে একটি রোগ। চোখে প্রদাহ হলে অশ্রুতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায় এবং অশ্রু মোছার সময় রোগের জীবাণু আমাদের হাতে চলে আসে। এর পর সেই হাত দিয়ে আমরা যা কিছুই স্পর্শ করি সেখানে ভাইরাস চলে যায়। এভাবে কারও সঙ্গে করমর্দন, টিভি অথবা এয়ার কন্ডিশনের রিমোট, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মুঠোফোন ইত্যাদি মাধ্যমে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে যায়।
চোখ ওঠার কারণ ও প্রতিকার
চোখ উঠলে করনীয়
বেশি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় রোগীকে এ ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বাহিরে যাওয়া উচিত নয়।
পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। এবং যতটা সম্ভব ওই কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে।
অন্য চোখেও যাতে এ রোগ না হয়, সেজন্য যতটা সম্ভব ভালো চোখে হাত না দেওয়াটা মঙ্গলজনক। তবে সাধারণত এ রোগে একই সাথে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখই আক্রান্ত হয়।
রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন- বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
চোখ ওঠার লক্ষণ, করনীয় ও চিকিৎসা
নবজাতকের চোখ উঠলে করনীয়
নবজাতকের চোখ উঠলে ওষুধপত্র দেওয়ার পরেও ২ থেকে ৩ দিন লাল অথবা ফোলা থাকতে পারে। লাল রং এবং ফোলা দীর্ঘসময় ধরে থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা
ভাইরাসের আক্রমণের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ জন্য দিনে ৩ থেকে ৪ বার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে হবে। আবার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্যও এটি ব্যবহার করা যায়। চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে হবে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন নেই। ব্যথা হলে ব্যথার ঔষুধ (প্যারাসিটামল) খাওয়া যেতে পারে। চোখের কালো রাজায় প্রদাহ হলে কৃত্রিম চোখের পানি, হোমাট্টপিন ইত্যাদি ওষুধ বেশ কার্যকর হতে পারে। তবে যেকোনো ওষুধ সেবন করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। চোখ সম্পুর্ণ সুস্থ হতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। তাই, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহারে রোগীর কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়। কর্নিয়ায় প্রদাহ হলে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে এমনকি কর্নিয়া সংযোজনের প্রয়োজন হতে পারে। তাই চোখ উঠা রোগে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
Comments
Post a Comment