পাকস্থলীর আলসার বা পেপটিক আলসার হলে করণীয় - আলসারের চিকিৎসা - আলসার ভাল...





পেপটিক আলসার হলো একধরনের ক্ষত বা ঘা যা পাকস্থলীর ভিতরের আবরণ, ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরিভাগে অথবা খাদ্যনালির ভেতরে হয়ে থাকে। সাধারণত পাকস্থলী, ইসোফেগাস ও ক্ষুদ্রান্ত্রের গাত্রে এসিডের কারণে এই ক্ষত হয়। এটি অনেকেরই হয়।নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে রোগ নিরাময় করা সম্ভব। পাকস্থলীর আলসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পেট ব্যথা। আবার দীর্ঘদিন পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন ইত্যাদি সেবন করলে আলসার হতে পারে। সাধারনত এসব ওষুধের সঙ্গে আলসার প্রতিরোধী ওষুধ যেমন- রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল ইত্যাদি খেলে এ সমস্যা হয় না।

হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে অনেক ক্ষেত্রে আলসার হয়ে থাকে। এছাড়াও এই এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে পাকস্থলীতে প্রদাহ হতে পারে। মুলত পাকস্থলী ও ডিওডেনামে পরিপাক রসের অসামঞ্জস্যতার কারনে পেপটিক আলসার হয়ে থাকে।

পেপটিক আলসারের প্রকারভেদ
পেপটিক আলসার সাধারনত তিন ধরনের হয়। যথা- গ্যাস্ট্রিক আলসার (এটা পাকস্থলীর ভিতরের আবরণে হয়), ইসোফেজিয়াল আলসার (এটা খাদ্যনালির ভেতরে হয়) এবং ডিওডেনাল আলসার ( এটা ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরিভাগে হয়)।

কাদের বেশি হতে পারে
আলসার সব বয়সেই হতে পারে তবে নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে আলসারের সমস্যা বেশি হয়। ধূমপান, মদ্যপান বা অ্যালকোহলে আলসারের বৃদ্ধি পায়। আবার পাকস্থলীর কোন অসুখ, যেমন- ক্যান্সার থাকলে আলসার হতে পারে। আবার ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওথেরাপি থেকেও আলসার হতে পারে।

পেপটিক আলসারের লক্ষণ
আলসারের প্রথম ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো বুক জ্বালাপোড়া করা বিশেষ করে অধিক মশলাদার বা তৈলাক্ত খাবার খেলে বুক ও পেটের সংযোগস্থলে জ্বালাপোড়া করে এবং টক ঢেঁকুর আসে।
এ রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো তীব্র বুকে ব্যথা। নাভী থেকে শুরু করে বুকের হাড় পর্যন্ত এমনকি পিঠ পর্যন্ত এই ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্সের ফলে এই ব্যথা হয়ে থাকে। খালি পেটে অর্থাৎ পাকস্থলী খালি থাকলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। অপরদিকে খাবার খেলে বা এসিডের ওষুধ খেলে সাময়িকভাবে ব্যথার উপশম হতে পারে। কিন্তু ক্ষুদ্রান্তের আলসারের ক্ষেত্রে, খেলেও ব্যথা বাড়ে। ব্যথা চলে গেলেও কিছু দিন বা কয়েক সপ্তাহ পরে আবার ফিরে আসে। ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে, এই ধরনের পেটের ব্যথায় রোগী ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে।
পেটের উপরের অংশে কিছুটা গরম অনুভূত হতে পারে।
বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমানে হেচকি উঠতে পারে।
আলসারের রোগীর খাওয়া দাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। খাবারে রুচি থাকে না এবং ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, রক্ত স্বল্পতা কিংবা অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
গ্যাসের সমস্যায় পেট ভরা মনে হয় আবার খাবার খেলে কিংবা অন্য যেকোনো সময়ে পেট ফাঁপা অনুভূত হতে পারে। কিছু সময় পর পর বায়ু ত্যাগের সমস্যা হতে পারে।
মারাত্মক আলসারের ক্ষেত্রে রোগীর লাল, কালো অথবা বমি ও রক্ত মিশে খয়েরি রঙের রক্তবমি হতে পারে।
আলসার মারাত্মক আকার ধারণ করলে পেটে রক্তক্ষরণের ফলে পায়খানার সাথে গাঢ় রংয়ের রক্ত যেতে পারে অথবা ঘন, আঠালো এবং কালচে আলকাতরার রঙের পায়খানা হতে পারে।
খাবার কমে যাওয়ার ফলে কিংবা হজমের গোলমালের কারনে ওজনও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

পাকস্থলীর আলসার বা পেপটিক
আলসার নির্ণয়ে পরীক্ষা

বেরিয়াম এক্সরে হতো। যদি কেউ অ্যান্ডোস্কোপি করতে ভয় পায় তাহলে বেরিয়াম এক্সরে করতে পারি। সেটি দিয়েও নির্ণয় করা যাবে। যিনি অ্যান্ডোস্কোপি করবেন উনি তো সচক্ষে দেখছেন। এই আলসারটা কী গভীর না সাধারণ। আরেকটি হলো উনি যদি মনে করেন অনেক সময় ম্যালিগনেন্সি হতে পারে। ম্যালিগনেন্ট আলসারও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বায়োপসি করার প্রয়োজনীয়তা আসবে। তখন উনি যদি চোখে দেখে বুঝেন এখানে ম্যালিগনেন্সির আশঙ্কা আছে, তখন বায়োপসি নিয়ে নিলেন। এটা বেরিয়াম এক্সরে করলে সম্ভব নয়। কাজেই রোগটি ভালোভাবে নির্ণয় করতে যে সুবিধা দরকার সেটি কেবল অ্যান্ডোস্কোপিতেই সম্ভব।

আলসারের চিকিৎসা
প্রথমত পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীকে ধূমপান বন্ধ করতে হবে এবং পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। খাবার গ্রহনে কোন অনিয়ম করা যাবে না।

আলসারের চিকিৎসা সাধারণত কারণের ওপর নির্ভর করে। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে আলসার হলে, বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় এবং প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর গোত্রের অ্যান্টি আলসারেন্ট জাতীয় ওষুধ। এতে কিছুটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- ডায়রিয়ার মতো পাতলা পায়খানা। সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

আলসার প্রতিরোধে করনীয়
আলসার প্রতিরোধে জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন-

নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া।
সিগারেট বা যেকোনো মাদকদ্রব্য বর্জন করা।
নিয়মিতভাবে এবং সঠিক পরিমানে ওষুধ সেবন।
শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহন।
অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়া।
অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া।
অ্যালকোহল, কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস বর্জন।
যেকোনো ওষুধ বিশেষ করে পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ সেবনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Comments