বাড়ির উঠোনে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধনের কাহিনী





বাড়ির উঠোনে খুঁড়তে গিয়ে যদি বেরিয়ে আসে এক ঘড়া মোহর বা এক বাক্স গয়না,
তাহলে কেমন হতো! ‘হিডেন ট্রেজার’ বা ‘ট্রেজার হান্ট’ নামক গুপ্তধন খোঁজার
খেলার মতো অনেক সময় বাস্তবেও খুঁজতে খুঁজতে বেরিয়েই আসতে পারে গুপ্তধন।
শুধু গুপ্তধনই বা বলি কেন, বহু প্রাগৈতিহাসিক যুগের অনেক নিদর্শনেরও হদিস
মেলে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা নিরলস গবেষণা করে চলেছেন মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা
সেসব বস্তুর সন্ধানে। এতে যেমন প্রয়োজন প্রচুর সময়ের, সেইসাথে থাকা চাই
অপরিসীম ধৈর্য।

যদি এমনটা হয়, আপনি প্রত্নতাত্ত্বিক নন, কিন্তু কোনো পরিশ্রম ছাড়াই পেয়ে
গেলেন ইতিহাসের কোনো এক মূল্যবান জিনিসের দেখা, তাহলে নিজেকে ভাগ্যবানদের
দলেই হয়তো গণ্য করে থাকবেন। বাড়ির উঠোনে বা ঠিক পেছনে অনাদরে পড়ে থাকা
জায়গায় কোনো কারণবশত খুঁড়তে গিয়ে আপনার খননকারী যন্ত্রের সাথে কোনো কিছু
বেধে যাওয়ায় থামিয়ে দিলেন খননকাজ। এরপর খুব সাবধানে বস্তুটি বের করে আনার
পর রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ! আপনার সামনে রয়েছে কিছু মূল্যবান বস্তু, যা স্মরণ
করিয়ে দেয় ইতিহাসের বিশেষ স্থান, কাল অথবা পাত্রকে। আজকে আপনাদের জানানো
হবে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির কথা।

খুঁজে পাওয়া ফেরারি গাড়ি

খুঁজে পাওয়া ফেরারি গাড়ি

প্রথমেই বলা যাক, ১৯৭৮ সালের একটি ঘটনা। লস এঞ্জেলেসের ওয়েস্ট এথেন্সের
একটি বাড়িতে এক দম্পতি তাদের সন্তানদের নিয়ে সবেমাত্র বসবাস শুরু করেন, এ
বাড়িতে তাদের বসবাসকাল তখন মাত্র ৩ মাস। বাড়ির আঙ্গিনায় দুই শিশু
খোঁড়াখুঁড়ি করছিল নিতান্তই খেলার বশে। খুঁড়তে গিয়ে তাদের কোদালের মাথায়
কিছু একটায় আঘাত লাগে। কৌতূহলের বশে আরও কিছুটা খুঁড়ে গাড়ির ছাদের মতো কিছু
একটা দেখতে পায়। পরে তাদের বাবা-মা ব্যাপারটা পুলিশকে জানালে, পুলিশ
জায়গাটা সিল করে দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি আরম্ভ করে। খোঁড়াখুঁড়ির এক পর্যায়ে
অবিশ্বাস্যভাবে বেরিয়ে আসে একটি পুরো ফেরারি গাড়ি। পরে তদন্ত করে এর বিষয়ে
বিস্তারিত জানা যায়। নীল রংয়ের গাড়িটির মডেল ছিল ফেরারি ডিনো ২৪৬ জিটিএস।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৬৪ সালে টেক্সাস ওয়েলম্যানে বসবাসরত এক বিধবা
মহিলা গাড়িটি ব্যবহার করতেন এবং তার অকস্মাৎ মৃত্যুর পর গাড়িসহই ওই
বৃদ্ধাকে কবর দেয়া হয়। গাড়িটি যাতে কেউ চুরি করতে না পারে, সেজন্য এর উপরে
বেশ পুরু করে কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়। তদন্ত শেষে গাড়িটি ইনস্যুরেন্স
কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়।



গ্লিপ্টোডন প্রজাতির গায়ের খোলস

গ্লিপ্টোডন প্রজাতির গায়ের খোলস

হঠাৎ করে যদি কেউ ডাইনোসর বা সে গোত্রীয় কোনো প্রাণীর ফসিল বা দেহ কাঠামো
খুঁজে পায়, তাহলে ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ হবে বৈকি। আর্জেন্টিনায় বসবাসরত
জোস অ্যান্টনিও তার ফার্মের পেছন দিকটায় এক বিশাল ডিম আকৃতির কিছু একটা
খুঁজে পায়, যার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩ ফুট। ডিম আকৃতির ওই জিনিসটায় একটা
ফুটোও ছিল। প্রাথমিকভাবে জোস এটাকে ডাইনোসরের ডিম ভাবে। পরে প্রাণীবিদরা
গবেষণা করে দেখেন, ওটা আসলে ছিল ডাইনোসর গোত্রীয় গ্লিপ্টোডন প্রজাতির
(ডাইনোসরের সময়ের প্রাণী) খোলস। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল এবং এদের গায়ের
উপরি আবরণ প্রচন্ড রকমের শক্ত হয়ে থাকে।



স্বর্ণালংকার

স্বর্ণালংকার

অস্ট্রিয়ার অধিবাসী এন্ড্রিয়াসকে ২০০৭ সালে খুঁজে পান এক বাক্স ভর্তি গয়না
এবং সিলভারের তৈজসপত্র। তার বেসমেন্টে কোনো কারণবশত খুঁড়তে গিয়ে খুঁজে পান
একটি বাক্স। অতঃপর বাক্স খুললে বেরিয়ে আসে আজ থেকে প্রায় ৬৫০ বছর আগেকার
গয়না। প্রায় ২০০টি গহনা এবং বেশ কিছু সিলভারের জিনিসপত্র ছিল সেখানে। তিনি
বাক্সটি খুব সযত্নে তুলে রাখেন এবং কিছুদিন পর বেমালুম ভুলে যান বাক্সটির
কথা। প্রায় দুই বছর পর বাসা বদলের সময় হঠাৎ তার নজরে আসে বাক্সটি। তিনি
বাক্সটি স্থানীয় একটি জাদুঘরে দান করে দেন।

উল্কাপিন্ডের ভগ্নাংশ

উল্কাপিন্ডের ভগ্নাংশ

‘উল্কাপিণ্ড’ শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। মহাশূন্যের অন্য কোনো
গ্রহ থেকে পৃথিবীর বুকে ছিটকে আসা প্রস্তরখণ্ড বা ধাতব কোনো টুকরোকে আমরা
উল্কাপিন্ড বলে থাকি। শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ উল্কাপিণ্ড প্রস্তরখন্ড আর বাকি
দশভাগের মধ্যে আয়রন এবং নিকেলের আধিক্য রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল বসনিয়ায়।
রেডিভোজ লাজিক তার বারান্দায় ছ’টি উল্কাপিন্ডের ভগ্নাংশ খুঁজে পেয়েছিলেন।
এই টুকরোগুলো তিনি একবারে পাননি, ক্রমান্বয়ে পেয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে
বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ টুকরোগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন
এবং নিশ্চিত করেন যে এগুলো উল্কাপিণ্ড। গবেষকগণ খুব অবাক হয়েছিলেন কেন
শুধুমাত্র লাজিকের বাড়িতেই উল্কাপিন্ডগুলো পতিত হয় তা ভেবে।

অ্যান্টি রেডিয়েশন বোম্ব শেল্টার

অ্যান্টি রেডিয়েশন বোম্ব শেল্টার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৫০ বছর পরের ঘটনা। ক্রিস ও কলিন
ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বাড়ি কেনেন। বাড়িটি কেনার সময় তারা শুনেছিলেন,
বাড়িটির পেছনে রয়েছে বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি অ্যান্টি রেডিয়েশন বোম্ব
শেল্টার। সেই সময় এই বাড়িতে বসবাস করতেন একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং তার সুরক্ষার
জন্য তিনি এটি বানিয়েছিলেন। বাড়িটি কেনার পর ক্রিস ও কলিন শেল্টারটি খুঁজতে
থাকেন, তবে খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না যে খুঁজে পাবেন। তাদের ধারণাটা ভুল
ছিল, শেল্টারটি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ছিল। শুধু তা-ই নয়, সে সময়ের
ব্যবহারোপযোগী পেপার টাওয়েল, স্লিপিং পিল, টিন ক্যান, কফি, বই ও ম্যাগাজিনও
ছিল সেখানে।

পিরামিডের সাথে সংযুক্ত সুড়ঙ্গ

পিরামিডের সাথে সংযুক্ত সুড়ঙ্গ

মিশরের পিরামিড নিয়ে কৌতূহলটা মানুষের বহুকালের। আজও পিরামিড নিয়ে অনেক
রহস্যের কোনো কূল-কিনারা পাওয়া যায়নি। মিশরের হারানিয়া গ্রামে বসবাসরত এক
ব্যক্তি তার বাড়ির পেছন দিকটায় খুঁড়ছিলেন। খোঁড়ার এক পর্যায়ে তিনি একটি
সুড়ঙ্গের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছান। ধারণা করা হয়, মিশরের সর্বাপেক্ষা বড়
পিরামিডের সাথে সংযুক্ত এই বিশাল সুড়ঙ্গটি। বিখ্যাত গ্রীক ইতিহাসবিদ
হেরোডটাসের মিশর ভ্রমণের বর্ণনায় এমন একটি সুড়ঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।



আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের দেহাবশেষ

আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের দেহাবশেষ

২০১৪ সালে ভারতের সল্টলেকে এমন একটি ঘটনার কথা শোনা যায়, যা
প্রত্নতত্ত্ববিদদের সাহায্য করেছে ভারতের আদি অধিবাসীদের সম্পর্কে নতুন করে
জানার ব্যাপারে। ১৪ বছর বয়সী আলী এরতার্ক তাদের বাড়ির উঠোনে পুকুর খননের
উদ্দেশ্যে খোঁড়াখুঁড়ি করছিল। বেশ খানিকটা গর্ত করার পর সে কিছু হাড় দেখতে
পায়, আশেপাশে আরো খুঁড়লে বেরিয়ে আসে প্রচুর হাড়গোড়। আলীর বাবা পুলিশকে খবর
দিলে তারা এসে হাড়গুলো ফরেনসিক টেস্টের জন্য নিয়ে যায়। রিপোর্টে আসে যে, এই
হাড়গুলো প্রায় ১,০০০ বছর পুরনো যা ছিল আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের দেহাবশেষ।

সোনার মোহর



সোনার মোহর

এক ঘড়া সোনার মোহর খুঁজে পাওয়ার গল্প আমরা রূপকথায় অনেক পড়েছি। কিন্তু
বাস্তবেও যে এমনটা ঘটতে পারে, তা কি আমরা কখনো কল্পনা করতে পারি? ২০১৩
সালের আমেরিকার একটি ঘটনা। এক বিবাহিত দম্পতি তাদের পোষা কুকুরটিকে সাথে
নিয়ে বাড়ির পেছনের খোলা জায়গাটায় হাঁটছিলেন। হঠাৎ করে তাদের নজরে আসে একটি
ময়লা বাক্স মাটি থেকে খানিকটা বেড়িয়ে রয়েছে। কৌতূহলবশত তারা বাক্সটি মাটি
থেকে বের করেন। একেবারে চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা, কারণ বাক্স ভর্তি ছিল
স্বর্ণমুদ্রা। বাক্সটির আশেপাশে খোঁড়াখুঁড়ি করলে তারা আরো আটটি
স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি বাক্স পেয়ে যান। ইতিহাসবিদদের মতে, মুদ্রাগুলো ১৮৪৭
থেকে ১৮৯৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ের। বেশ কিছু মুদ্রা একেবারে নতুন অবস্থায়
ছিল, দেখলেই বোঝা যায় মুদ্রাগুলো কখনো ব্যবহৃত হয়নি। স্বর্ণমুদ্রাগুলোর
আনুমানিক বাজারদর প্রায় ২৭,৯৮০ ইউএস ডলার।

Comments