গুগল সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি?
১৯৯৮ সালে শুরু করার পর থেকে গুগুল যে কাজের জন্য সবচে আলোচিত তা হল লোগো, যাদেরকে অফিসিয়ালি আদর করে "ডুডল" বলা হয়। প্রথম ডুডলটি প্রতিষ্ঠাতা লেরি পেজ আর সারগেই ব্রিন দুজনে মিলে বানিয়েছিলেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের বানানো ডুডলের সংখ্যা ১৭০০'রও বেশি! ডুডল যারা বানায় তাদেরকে বলা হয় ডুডলার। http://www.google.com/doodles/finder/2014/All%20doodles এই ঠিকানায় গিয়ে দেখে আসতে পারেন, হাউ মেনি ফাকিন টাইমস অ্যা সিঙ্গল লোগো কুড বি ডিজাইনড ডিফ্রেন্টলি!
গুগুল পৃথিবীর সবচে গুরত্তপূর্ণ ইন্টারনেট সার্ভিস। কিন্তু এর হোমপেজ নির্ভুল নয়। গুগলের হোমপেজে ভুলের সংখ্যা ২৫ টি। বিশ্বাস না হলে চেক করে নিন। http://validator.w3.org/ এই লিঙ্কে যান। লিখুন google.com এবং চেক বাটনে ক্লিক করুন। আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ originalxamir.com এ ভুলের সংখ্যা ৫০। সুতরাং যে কোন একটি দিকে আমি গুগলের দিগুণ অবস্থানে আছি!!!! এই ব্যাপারে সারগেই ব্রিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনিও আমার মতো বলেছিলেন- "আগামিকাল ঠিক করে দিবো।" কিন্তু এই "আগামিকাল"টা আর আসেনি
গুগলের নাম প্রথমে হওয়ার কথা ছিল ব্যাকরব। গুগলে যেইভাবে সার্চ রেজাল্ট মেন্টেইন করে তাই ব্যাকরব (backrub)। পরে একবার কথা উঠেছিলো নাম হবে "ওয়াটবক্স" কিন্তু পরে তা হয়ে যায় গুগল। ১এর পর একশোটি শুন্য বসালে যেই সংখাটি পাওয়া তাকে বলা হয় গুগল, যার আসল বানান Googol, কিন্তু গুগলের মালিকদ্বয় বানান ভুল করে লিখেন Google. পরে বানান শুদ্ধ করার পরিশ্রমটুকু আর তাদের করতে ইচ্চা হয়নি। আইলসার আইলসা!
২০০৯ সালে পুরো পৃথিবীর ইন্টারনেট ১ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তদন্ত করে দেখা যায় গুগলের একজন প্রোগ্রামার ভুল করে ব্লকড ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রিতে একটা ফরওয়ার্ড স্ল্যাশ (/) দিয়ে দিয়েছে, যা আলটিমেটলি দুইন্নার সব ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়। চিন্তা করুন, তথ্য প্রযুক্তির এতো উন্নতি হওয়ার পরেও, সারা পৃথিবীর ইন্টারনেট একটা অতিরিক্ত শ্ল্যাশের চাপ শামলাতে পারেনি। পিঁপড়া আর হাতির গল্প ফেইল!
গুগলের অফিসিয়াল স্লোগান হলো "ডোন্ট বি এভিল", ধারনা করা হয় গুগল এইটি বানিয়েছে- তার কম্পিটিটর আর শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশে ঝাড়ার জন্য। তাই যদি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখেন গুগলের লোগোর নিচে লিখা "ডোন্ট বি এভিল', ভাববেননা হ্যাকাররা গুগলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। শয়তানি বন্ধ করুন।
গুগল প্রায় সব ভাষাভাষীদের নিজস্ব ভাষায় সেবা প্রদান করে থাকে। আপনি যদি এমনকি স্টার ট্রেকের (কমিক্স) চরিত্র হন, আপনার জন্য রয়েছে গুগল ক্লিঙ্গনঃ https://www.google.com/?hl=xx-klingon
হ্যাকারদের জন্য রয়েছে গুগল হ্যাকারঃ https://www.google.com/?hl=xx-hacker
জলদস্যুদের জন্য গুগল পাইরেটঃ https://www.google.com/?hl=xx-pirate
দুস্ট মিস্টি শুকরদের জন্য রয়েছে গুগল পিগ ল্যাটিনঃ https://www.google.com/?hl=xx-piglatin
জাস্ট "আমারে মাইরালা!" টাইপ ব্যাপারসেপার।
গুগলের হোম পেইজ একদম খালি। লোগো আর সার্চ বক্সটি ছাড়া কিছুই নেই। এর কারন ল্যারি আর সারগেই এইটিএমএল ভালো জানতেন না। কোনমতে লোগো আর সার্চ বক্সটা দিয়েই কাজ খালাস! এমনকি দীর্ঘদিন ধরে হোম পেইজে কোন সাবমিট বাটনও ছিলো না। সার্চ করার জন্য আপনাকে এন্টার চাপতে হতো।
গুগলের অনেকগুলা হিডেন ফিচার আছে যা মাঝে মাঝে কেউ একজন আবিস্কার করে তার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। যেমন গুগলে সার্চ করেন - askew, গুগলের পুরো পেইজটা ডানদিকে হেলে পড়বে। যদি লিখেন answer to life the universe and everything, গুগল আপনাকে একটা ক্যালকুলেটর দেখাবে যাতে ফলাফল দেয়া থাকবে ৪২। আপনি যদি লিখেন once in a blue moon, আপনি রেজাল্ট হিসেবে পাবেন একটি উদ্ভট ইকুয়েশন। সো, সার্চ অ্যা লডব বুলশিট অন গুগল, বি এমেজড!
ইন্টারেন্টের তথ্য সমুদ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যটি কিভাবে বের করবেন, তা নিয়ে ঝামেলায় আছেন। চিন্তার কোন কারন নেই। গুগলের প্রচুর ফিচার আছে যা আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটি বের করে আনতে সাহায্য করবে। এদেরকে বলা হয় অপারেটর। যেমন আপনি নির্দিষ্ট সাইট থেকে কোন ডাটা খুজতে হলে, সাইট লিখে কোলন দিন, সাইটের নাম লিখুন, তারপর কোয়েরি লিখুন। যেমন আপনি এমাজনে লুমিসের বইগুলা খুজবেন, আপনাকে লিখতে হবে site: amazon loomis, আপনি যদি কোন ফ্রেজ খুজেন, আলাদা আলাদা শব্দ নয়, তাহলে সম্পূর্ণ ফ্রেজটি লিখে কোটেশন মার্কের মধ্যে এনে সার্চ করেন। যেমনঃ "screwed up", যদি সার্চ থেকে কোন কিছু বাদ দিতে চান, তাহলে মাঝখানে একটি ডেশ দিন। যেমনঃ আমি independent খুজবো, কিন্তু টিভি নয়, তাহলে লিখুন independent -tv, এর ফলে ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাথে টিভি আছে এইরকম কোন রেজাল্ট গুগল দেখাবে না। যদি নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেমের মধ্যে খুজতে চান তাহলে কোয়েরির পর সময় লিখে দিন। যেমনঃ "Osama bin Laden" 2013-2014, অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৪র মধ্যে ওসামা সম্পর্কিত নিউজগুলা চাই। প্রিটি সিম্পল হ্যাঁ? সিম্পল না হলে রেফারেন্স নিন, এইখানে সব অপারেটরস আছেঃ http://jwebnet.net/advancedgooglesearch.html , দিজ শিট ইজ কল্ড, আনঅফিশিয়াল গুগল এডভান্স সার্চ!
গুগল সম্পূর্ণ ফ্রি সার্ভিস। শাট আপ! গুগল কখোনই ফ্রি নয়। গুগল আপনাকে সার্ভিস দিচ্ছে, বিনিময়ে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য নিচ্ছে। ক্রোম ইউজ করছেন, আপনে সারা জীবনে কি কি সার্চ করেছেন, সব সে জানে। লগড ইন করা ক্রোম থেকে history.google.com এ যান, আপনার প্রতিটি সেকন্ডের হিসাব তারা রেখেছে। শধু কোন কোন ওয়েবসাইট আপনে ভিজিট করছেন, তাই নয়, গুগল জানে কোন পেইজে আপনি কতক্ষন ছিলেন, কি করেছিলেন। গুগল জানে আপনার মেইলে কি আছে, গুগল ক্যালেন্ডার ইউজ করলে গুগল জানে আপনি এখন কার সাথে আছেন, এন্ড্রয়েড ইউজ করেন, তারা যেকোন সময় জেনে নিতে পারে আপনি কোথায় আছেন। আপনি কি দেখছেন (youtube),আপনি কি পরছেন (google books), আপনি কি কিনছেন (google shopping), আপনে কার সাথে কথা বলছেন (google voice)। গুগলের কাছে আছে অটোমেটিক ফেইস রেকগ্নিশন সিস্টেম যা ছবি দেখেই বলে দিতে পারে, এইটা আপনে নাকি আপনার বন্ধু! অর্থাৎ, গুগল আপনার সম্পর্কে এতো বেশি কিছু জানে যা আপনি নিজেও জানেন না। আপনি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখুন, ফ্রি সার্ভিস দিয়ে একটা কোম্পানি কিভাবে পুরো বিশ্বের দখল নেয়।
তবে গুগল সম্ভবত সভ্যতার সবচে কার্যকরী আবিস্কার। অতীতের কোন আবিষ্কারই এতো মানুষ ব্যাবহার করেনি।
Comments
Post a Comment